শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
মৃত্যুর পর আল্লাহতায়ালা মানুষের কর্মের হিসাব নেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি জন্ম এবং মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের যাচাই করতে পারেন যে, কর্মক্ষেত্রে তোমাদের মধ্যে কে বেশি উত্তম। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক : ২)
শিরকের গোনাহ আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন না, তবে এমন কতক গোনাহ আছে যা করলে আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে তাদের দিকে তাকাবেন না, কথাও বলবে না। তারা হলেন
দান করে খোঁটা দানকারী : দান করে খোঁটা দান করা জঘন্যতম অপরাধ। খোঁটা দিলে উপকারের সওয়াব বিনষ্ট হয়। তাই দান করে খোঁটা প্রদান করা কবিরা গোনাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা স্বীয় ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্ট দেয় না, তাদের জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৬২)
মূলত যারা সংকীর্ণমনা, অকৃতজ্ঞ তারা দান করে খোঁটা প্রদান করে। আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে তাদের সঙ্গে কথা বলবে না। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবে না। খোঁটা দানকারী ব্যক্তি, মিথ্যা শপথকারী এবং টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। (সহিহ মুসলিম : ২০২)
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী : পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। কোনো পুরুষ যদি টাখনুর নিচে কাপড় পরে এবং তা নিয়মিত করতে থাকে, তাহলে আল্লাহতায়ালা কেয়ামত দিবসে তার সঙ্গে কথা বলবেন না। প্রাচীন যুগে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করাকে অহংকার বলে গণ্য করত। যেহেতু আল্লাহতায়ালা অহংকারীকে পছন্দ করে না তাই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারের সঙ্গে কাপড় নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের পবিত্রও করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি। তার মধ্যে একটি হলো টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা।
বৃদ্ধ ব্যভিচারী : ব্যভিচার জঘন্যতম অপরাধের একটি। ব্যভিচার থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহতায়ালা বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এরপরও যারা জেনা করবে আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য শাস্তির বিধান উল্লেখ করেছেন। কেউ যদি শয়তানের ধোঁকায় পরে ব্যভিচার করে ফেলে, সে যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর যদি বৃদ্ধ হয় তাহলে রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশটি করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে গিয়ে তাদের ওপর যেন তোমরা দয়াপরবশ না হও যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর মুমিনরা যাতে তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। বৃদ্ধ ব্যভিচারীর শাস্তি এজন্য বেশি হবে যে, একজন যুবকের থেকে তার প্রবৃত্তির নেশা কম হবে, সে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবে। এজন্য আল্লাহতায়ালা বৃদ্ধ ব্যভিচারীর প্রতি নারাজ থাকবেন বেশি এবং তাদের রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
অহংকারী : মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি পরাক্রমশালী। তার সমকক্ষ কেউ নয়। বড়ত্ব শুধু মহান আল্লাহর জন্য শোভা পায়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, অহংকার আমার সম্মানের উত্তরীয় আর সম্মান হচ্ছে আমার গৌরবের পোশাক; যে ব্যক্তি দুটির কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৯০)।
অহংকার হলো শয়তানের চরিত্র। অহংকার এবং হিংসা ইবলিশকে ফেরেশতাদের শিক্ষক থেকে শয়তানে পরিণত করেছে।
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম : ৯১)
মিথ্যাবাদী শাসক : এক হাদিসে এসেছে, মুমিন চুরি করতে পারে, ব্যভিচার করতে পারে; কিন্তু মুমিন মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ যখন কেউ মিথ্যা কথা বলে তখন ফেরেশতারা তার দুর্গন্ধে অনেক দূরে চলে যায়। সবার জন্য মিথ্যা কথা বলা জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রপ্রধান মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। সে তো যা চাইবে তাই করতে পারবে। এর পরও যদি সে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, সেটা হবে কবিরা গোনাহ, যার শাস্তি ভয়াবহ। এরূপ মিথ্যাবাদী শাসকদের প্রতি আল্লাহ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।
মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা : সহিহ বোখারি শরিফের এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী কারিম (সা.) সাহাবাদের বলেন, আমি কি তোমাদের গুরুতর অপরাধের কথা বলব না? সাহাবারা বললেন, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসলেন (পরবর্তী কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করার জন্য) এবং বললেন, মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
এ কথাটি তিনি এত বেশিবার বলতে লাগলেন যে, সাহাবারা মনে মনে বলতে লাগলেন, এবার যদি তিনি থামতেন!
ভয়েস/আআ